বাংলা সিনেমার জন্য হল: ফলপ্রসূ অরূপ-টলিউড বৈঠক, খুশি দেব-ঋতুপর্ণা-কৌশিকরা

0
2

বলিউড আগ্রাসনে কোণঠাসা বাংলা সিনেমা! বাংলায় বাংলা ভাষার সিনেমা কেন প্রাইম টাইমে শো পাচ্ছে না? কেন বড় বাজেটের কোনও হিন্দি ছবি এলেই বক্স অফিস কালেকশন ভালো হওয়া সত্ত্বেও সিনেমা হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলা ছবিকে? এবার ‘No Show Sharing’- এর প্রতিবাদে এককাট্টা টলিউড। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এল রাজ্য সরকার। হিন্দি ছবির তথাকথিত দাপটে বাংলা ছবির প্রদর্শনে সঙ্কট কাটাতে টলিউডের প্রতিনিধি হিসেবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta), দেবের (Dev) সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন সব প্রডিউসার, ডিস্ট্রিবিউটর এবং এক্সিবিটাররাও। ঘণ্টাখানেক ধরে আলোচনা চলার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্বকারী অভিনেতারা জানান বৈঠক ফলপ্রসূ। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, প্রায় ২ লক্ষ লোক এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। চলতে চলতে সমস্যা থাকে আবার চলতে চলতেই সমাধান হয়। বড় কোন সমস্যা ছিল না। কাজ করতে গেলে অনেক রকমের মতপার্থক্য হতেই পারে। সবাই মিলে আমরা একসঙ্গে বসেছি সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এবার থেকে বাংলা সিনেমা প্রাইম টাইমেই বাংলার সব হলে চলবে।

একবার বা দুবার নয় বার বার একই ঘটনা। যখনই কোনও বড় নামের হিন্দি ছবি আসে সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সব সিনেমা হলে নিজেদের ভাষার সিনেমার জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে যখন শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ মুক্তি পায় তখন ‘নো শো শেয়ারিং’ নীতি নিয়েছিলেন হল মালিকরা। ফলে সেই সময় মুক্তি প্রাপ্ত ভালো বাংলা ছবিকেও রাতারাতি প্রাইম টাইম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনা নতুন নয়। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিনেতা দেব (Dev) বলেন যখন তিনি ‘টনিক’ রিলিজ করতে চেয়েছিলেন তখন ’83’ নামে একটি সিনেমার জন্য তাঁকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ছবিটা যে এখনও বদলায়নি, তার প্রমাণ ‘ধূমকেতু’ (Dhumketu ) বনাম ‘ওয়ার ২’ লড়াই। ১৪ অগাস্ট মুক্তি পাচ্ছে দেব-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের বহু প্রতীক্ষিত ছবি। পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাবে হৃতিক রোশন-কিয়ারা আডবাণী অভিনীত বলিউড ছবি ‘ওয়ার ২’ (War 2)। হিন্দি সিনেমার পরিবেশকদের শর্ত, সিঙ্গল স্ক্রিনের চারটি শো ছবিকে দিলে তবে বাংলায় ছবিটি মুক্তি পাবে। অর্থাৎ তারা শো ভাগাভাগি করবেন না। এই কথা কানে আসতেই বেজায় চটেছেন অভিনেতা প্রযোজক দেব (Dev)। তাঁর প্রশ্ন, “খাদানের মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা দেওয়ার পরও যদি আমাকে এই ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাহলে বাকি প্রোডিউসাররা কী করবেন?”এই একই সমস্যায় ভুক্তভোগী অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাই বাংলা ছবির প্রদর্শন সঙ্কট কাটাতে মঙ্গলবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিংহ রানে-সহ বাংলা বিনোদন দুনিয়ার প্রথম সারির সমস্ত ব্যক্তিত্বরা একজোট হয়ে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী তৎপরতায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas) আজ টলিউডের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তিনি জানিয়েছেন, সব জটিলতা কেটেছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই বৈঠক ছিল সেটা সদর্থক। বাংলায় বাংলা ভাষার ছবিই প্রাধান্য পাবে। কোনও সমস্যা হবে না। আজকাল কেউ কেউ বাংলাভাষাকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। বলছেন বাংলা নাকি কোন ভাষাই নয়। মুখ্যমন্ত্রী আর একটা ভাষা আন্দোলন শুরু করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষা নাকি ভাষাই নয়। বাংলা ভাষায় যাতে আরও বেশি করে বাংলা সিনেমা তৈরি হয়, দর্শক দেখতে পান সেটা নিয়ে আলোচনা ছিল। এটা ফলপ্রসু হয়েছে।

যতদিন বাংলা-বিদ্বেষ চলবে লড়াই চলবে: রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

এদিন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) বলেন, তিনটে বা চারটে প্রোডাকশন হাউজ নিয়ে একটা ইন্ডাস্ট্রি চলেনা। তাই বাইরে থেকে এসে যাঁরা ছবিতে টাকা ঢালতে চাইছেন তাঁদের ছবি যদি সিনেমা হল না পায়, তাহলে তো প্রডিউসারের একে একে বাংলা ছবিতে ইনভেস্ট করার আগ্রহ হারাবেন। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার জন্য রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly) বলেন, সব সময় বাংলার দর্শকদের এটা একটা অভিযোগ থাকে যে সিনেমা দেখার জন্য যথেষ্ট পর্যাপ্ত হল পাওয়া যায় না।। বাংলা ভাষার ছবির মর্যাদা বাংলাতে না থাকলে কোথায় থাকবে। তবে আশা করা হচ্ছে, আর এই ধরনের কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। বাংলায় অন্য সব ছবি চলবে, কিন্তু বাংলা সিনেমাকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া হবে।