বাংলা ভাষায় লেখা একটি পরিচয়পত্রকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করে দিল্লির লোধি কলোনি থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বঙ্গভবনের অফিসার ইন-চার্জের কাছে অনুবাদ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পক্ষে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা চূড়ান্ত অপমান এবং এটি বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাভাষী মানুষদের উপর নির্যাতন চলছে। এবার সেই সীমা অতিক্রম করল দিল্লি পুলিশ। প্রকাশ্যে আনা হয় একটি সরকারি চিঠি, যাতে লেখা— “Translation of documents containing text written in Bangladeshi language.
তৃণমূলের দাবি, এই চিঠি বাংলা ভাষার অবমাননা। সংবিধানের ৮ নম্বর তফসিলে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত, ২২টি ভাষার মধ্যে একটি। এমন ঘটনা ভারতের সংবিধানের লঙ্ঘন। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী আধিকারিককে অবিলম্বে সাসপেন্ড করতে হবে এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ বলেন, বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও বাংলা বললেই সন্দেহ করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। পূর্বেই দেখা গেছে, পুনেতে এক কার্গিল যুদ্ধযোদ্ধাকেও অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়া হয়েছিল। দিলীপ কুমার সাহা নামের এক ব্যক্তি এই আতঙ্কেই আত্মহত্যা করেছেন, তাঁকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হবে এই ভয়েই। তাঁর স্ত্রী আরতি সাহা ভিডিয়ো বার্তায় সে কথা জানিয়েছেন। কেন্দ্র সরকার এমন এক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে বৈধ ভারতীয়রাও নিজেদের নাগরিকত্ব নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, “এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে শুধুই বাংলাকে নয়, সমগ্র ভাষাবৈচিত্র্যকেই আঘাত করা হচ্ছে। আজ যদি বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলা হয়, কাল অন্য ভাষাকেও বলা হবে। এটি ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির পরিপন্থী।
দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, বাংলা ভাষা কেবল ভাষা নয়, এটি আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। আমাদের জাতীয় সংগীত বাংলায় লেখা। ইউনেস্কো স্বীকৃত প্রথম সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। বাংলা ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা মানে গোটা ভাষাভাষী সমাজকে অপমান করা। তাঁর প্রশ্ন, “রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল— এঁরা সবাই বাংলা লিখতেন। তাহলে তাঁদেরও কি বাংলাদেশি বলা হবে?”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে নিশানা করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলায় থাকেন, বাংলা বলেন, বাংলা কবিতা পড়েন। এখন বলুন— বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলা কি আপনি সমর্থন করেন?
বিজেপির পুলিশের এই অপমানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। কেন্দ্র যদি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন – অবজ্ঞা ও মূর্খামির চূড়ান্ত: বাংলা ভাষার উপর আক্রমণে সরব রূপম, সুরজিৎ
_
_
_
_
_
_

















































































