চাঁদের পাহাড়ে বাস্তবের ‘শঙ্কর’ জ্যোতিষ্ক

0
2

চাঁদের পাহাড়- কিশোর বয়সের বাঙালির অন্যতম সেরা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী। লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কোনওদিন যাননি আফ্রিকায়। কিন্তু নিখুঁত বর্ণনা উঠে এসেছে তাঁর লেখনিতে। সেই চাঁদের পাহাড় (Chander Pahar) পড়েই সেখানে যেতে চেয়েছিল বাংলার আরেক অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় নদিয়ার করিমপুরের ছেলে জ্যোতিষ্ক বিশ্বাস (Jyotiskho Biswas)। উপন্যাসের শঙ্করের মতো, তিনিও পৌঁছে গিয়েছেন মাউনটেন অফ দি মু ন-এ।

আফ্রিকার (Africa) একটা বড় পর্বত- চাঁদের পাহাড় তথা মাউনটেন অফ দি মু ন। বিভূতিভূষণের শঙ্কর চাঁদের পাহাড়ের ধারেকাছে যায়নি। চাঁদের পাহাড় ছিল শঙ্করের স্বপ্ন এবং তার অভিযানের অনুপ্রেরণা। আফ্রিকায় প্রথম পা রাখে শঙ্কর মোম্বাসায় গিয়েছিল। তার পরে কিসুমু। চাঁদের পাহাড়ের মাত্র ৪০০ মাইল দূরে সেখানেই ছিল তার প্রথম পোস্টিং। বিভূতিভূষণ লিখেছেন, “মোম্বাসা থেকে রেলপথ গিয়েচে কিসুমু-ভিক্টোরিয়া-নায়ানজা হ্রদের ধারে— তারই একটা শাখা লাইন তখন তৈরি হচ্ছিল। জায়গাটা মোম্বাসা থেকে সাড়ে তিনশো মাইল পশ্চিমে। ইউগাণ্ডা রেলওয়ের নুডসবার্গ স্টেশন থেকে বাহাত্তর মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে”।

তবে, বাস্তবে শঙ্কর জ্যোতিষ্ক (Jyotiskho Biswas) পৌঁছে গিয়েছেন চাঁদের পাহাড়ে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজের তার পর পর বিবরণ দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে গুচ্ছ ছবি আর রিলস। তিনি লেখেন, “চাঁদের পাহাড়“ মানুষকে কতদুর নিয়ে যেতে ওরে সেটাই দেখবার , আমার অদৃষ্ট আমায় আফ্রিকায় টেনে নিয়ে এলো“।

তাঁর কথায়, ”বিস্ময়কর আত্মার বিদায়, আমরা যেন এই গ্রহের অন্য কোথাও একে অপরের সাথে আবার দেখা করতে পারি।” কোথাও লিখছেন, ”কেনিয়ার বুকে, যেখানে বন্যেরা মুক্তভাবে চলে এবং সূর্যাস্ত আকাশকে রং করে, আমি আরও বেশি শ্বাসরুদ্ধকর কিছু খুঁজে পেয়েছি @ttukutuku

সাভানার মাধ্যমে প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতি মুহূর্তে জেব্রাসদের ঘুরে বেড়ানো এবং হিপ্পোপোটামাস বিশ্রাম দেখা, আমি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই দেখছিলাম না- আমি আবিষ্কার করছিলাম যে বিশ্বকে বিস্ময় এবং যত্নের সঙ্গে দেখে তার সাথে এটি ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ।

আপনার দয়া, আপনার হাসি, এবং আপনি যেভাবে আমার হৃদয়ের জন্য জায়গা রেখেছেন তা একটি ভ্রমণের চেয়েও বেশি কিছু করেছে। এটা একটি স্মৃতি হয়ে গেছে যা আমি চিরকাল ধরে রাখব। আমার পথপ্রদর্শক, আমার সঙ্গী এবং অপ্রত্যাশিত জাদু হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ যা আমি জানতাম না যে আমার প্রয়োজন।”

শঙ্করের মতো জ্যোতিষ্কও বোধহয় মোহবিষ্ট। তিনি লিখছেন,
”বিভূতিবাবু আমায় বললেন – শঙ্কর কিন্তু সাবলম্বী একটা চরিত্র,তুমি কিন্তু কল্পনার শঙ্কর নও, তুমি বাস্তবের শঙ্কর, তুমি চাঁদের পাহাড় যাবে বলে কারোর সাহায্য চাইতে পারো না , তুমি ভালো করে ভেবে নাও এবং আমাকে কথা দাও কারুর কাছে হাত পাতবে না যাত্রা করার জন্য
জ্যোতিষ্ক – আপনি যা বললেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো, করলে শুধু মাত্র নিজের অর্জিত অর্থেই ..
বিভূতিবাবু – যাও”।

তবে, চাঁদের পাহাড়ে যাওয়াই একমাত্র নয়। এর আগেও জ্যোতিষ্ক বেরিয়েছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৩৬৪ মিটার বা ১৭,৫৯৮ ফুট উচ্চতায় তুষারবৃত বিশ্বের উচ্চতম বেস ক্যাম্পে যান সাইকেল চালিয়ে। সেখানে থেকেই শুরু হয় ‘এভারেস্ট ক্লাইম্বিং’। পাহাড়ের কোলেই বড় হয়ে ওঠা জ্যোতিষ্কর। পড়ার জন্য কলকাতায় চলে এলেও তাঁর মন পড়ে পাহাড়ে। তাই সাইকেলে চড়েই শেষ করেছেন সমুদ্র থেকে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প যাত্রা। এবার চাঁদের পাহাড়ে বাংলার শঙ্কর।