সেনার গাড়ির লাগামছাড়া ড্রাইভিং! মানুষের অভিজ্ঞতা কিন্তু তেমনটাই বলছে

0
8

অভিজিৎ ঘোষ
শুরুতেই জানিয়ে রাখি, এই প্রতিবেদন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army) দেশের গর্ব। তাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং আত্মবলিদান নিশ্চিতভাবে আমরা মনে রাখি। তাদের জন্যই দেশবাসী সুরক্ষিত। কিন্তু মঙ্গলবার রাইটার্স বিল্ডিংয়ের মুখে সেনার গাড়ি নিয়ম না মেনে রাস্তা ঘুরছিল। কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছে পিছনে আসা দুটি গাড়ি (Car)। তারপরই গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবং যথারীতি বিতর্ক। এবং অস্বীকার।

প্রথমেই বলে রাখা ভাল দুর্ঘটনা পড়তে পারত যে গাড়ি দুটি সে দুটি কলকাতার নগরপালের না হলেও বক্তব্য একই থাকত। আর সেনার গাড়ি নিয়ে একাধিক পরিচিত মানুষের অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখপ্রদ নয়।

ঘটনা এক: সহকর্মী জয়িতা মৌলিক। তখন রাঁচিতে পোস্টেড। বর্ধমান রোড ধরে স্কুটিতে করে যাচ্ছিলেন। চালাচ্ছিলেন আর এক মহিলা সহকর্মী। পিছনে সেনার সবুজ গাড়ি। হর্ন দিতে দিতে পিছনে ব্রিজের উপর। ন্যাড়া ব্রিজ। রেলিং নেই। একটু এদিক ওদিক হলেই সোজা জলে। জয়িতাদের স্কুটার চাপতে শুরু করল সেনার গাড়ি। দুই মহিলা দেখে উৎসাহ বেশি। পড়ে যাওয়ার মুখে ওরা প্রাণ ভয়ে স্কুটি দাঁড় করিয়ে দিতে বাধ্য হল। সেনার গাড়ি ওদের স্কুটিকে কার্যত ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। এবং কী আশ্চর্য গাড়ির জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে সেনা কর্মী হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল! এদের হাতে মহিলা নিরাপত্তা সুরক্ষিত! ভাবতে কষ্ট হয়।

ঘটনা দুই: ঘটনাস্থল এয়ারপোর্ট এলাকা। আমার পরিচিত একজনের সামনে সেনার গাড়ি পড়ে যায়। সামান্য ধাক্ক লাগে। দোষ দুজনেরই। এসেই সেনার বজ্জাতি। ঘিরে ধরে মারধর করতে উদ্যত। ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল। তারা সবটাই দেখেছে। সেনাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। তর্ক বাড়তে থাকল। হঠাৎ ঘুষি চালিয়ে আমার পরিচিতের চোখের পাতা ফাটিয়ে দিল এক সেনাকর্মী। এবার পুলিশ অ্যাক্টিভ। ধরল দুই অভিযুক্তকে। থানায় নিয়ে যাবে। সেনার দল এসে দুই অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল পুলিশ ভ্যান থেকে। পুলিশ দর্শক!

ঘটনা তিন: এই প্রতিবেদক সাক্ষী। মিনিতে রয়েছি। পার্ক স্ট্রিটের মোড়ের কাছে ডান দিকে বাসটি ঘুরবে। আমি কন্ডাক্টরের গায়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। পাশে সেনার গাড়ি। সিগন্যাল হতেই ডান দিকে ঘুরছে বাস। সঙ্গে সেনার গাড়িও। কোথাও অ্যাক্সিডেন্টের চিহ্ন নেই। হঠাৎ দেখি বাসের সামনে সেনার গাড়ি। থেমে গেল। দৌড়ে বেরিয়ে এল এক সেনা কর্মী। এসেই কন্ডাক্টরকে বেধড়ক মার। প্রতিবাদ করতে আমাদের দিকে তেড়ে এল সেই সেনা কর্মী। এবার আরও ক্ষুব্ধ হয়ে কন্ডাক্টরের ব্যাগ টেনে ফেলে দিল। গোটা রাস্তায় ছড়িয়ে গেল খুচরো। বললাম চলো পার্ক স্ট্রিট থানায়, সেখানে কথা হবে। কী আশ্চর্য পুলিশও কেমন জড়োসড়ো। এবং এসব অসভ্যতা করার পর ফোর্ট উইলিয়াম থেকে লোক আনছি বলে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল। যারা সেদিন কান্ডটি ঘটিয়েছিল, তারা কারা? হুলিগান বললে কি কম বলা হবে?

সেনা নিয়ে এই অভিজ্ঞতাও আছে। এরকম অসংখ্য। ফলে রাইটার্সের সামনে মঙ্গলবারের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সেনার (Army) পোশাককে হাতিয়ার করে অনেক ঘটনাই ঘটে। খুঁজলে আরও অজস্র ঘটনা সামনে আসবে। শুধু দেশাত্মবোধের ধুয়ো তুলে সেনাকে আলাদা গ্রহের মানুষ বলে চিহ্নিত করা যাবে না। ভুলকে ভুল বলতেই হবে। আর সেনাকর্মীদেরও বুঝতে হবে সেনার উর্দিকে মানুষ সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। তাকে হাতিয়ার করে এমন ঘটনা কেন ঘটবে?