বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশের থেকে ভারতে শুল্ক সবথেকে বেশি, এটাই দাবি করে ভারতের উপর শুল্ক চাপানো শুরু করেছিল আমেরিকা। এবার ট্রাম্প দাবি করলেন আমেরিকা না কি ভারতের সঙ্গে কিছুই বাণিজ্য করে না। ভারতই আমেরিকায় নিজেদের জিনিস বিক্রি করে। অথচ হিসাব বলছে ভারত থেক প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে ১০ হাজার কোটির বেশি মার্কিন ডলার লাভ করে মার্কিন সংস্থাগুলি। এবার ভারত শুল্ক (tariff) শূন্য করে দেওয়ার চেষ্টা চালালেও তাই আমেরিকা আর মানবে না। কারণ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, দাবি ট্রাম্পের। যদিও ভারত থেকে এরকম কোনও প্রস্তাবের কথা এখনও বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) তরফে দাবি করা হয়নি।
এবার নিজের ট্রুথ হ্যান্ডেলে ট্রাম্প (Donald Trump) দাবি করলেন, ভারতে আমরা খুব সামান্য ব্যবসা করি। ভারত আমাদের বাজারে বিপুল ব্যবসা করে। অন্যভাবে বললে, ভারত তাদের বিপুল সামগ্রী আমাদের বিক্রি করে, তাদের সবথেকে বড় ‘ক্লায়েন্ট’। কিন্তু আমরা তাদের সামান্য জিনিসই বিক্রি করি। এতদিন একটা একপেশে ব্যবসা হয়ে আসছে। এতদিন পর্যন্ত, বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশের থেকে ভারত এত বেশি শুল্ক আমাদের উপর ধার্য করেছে আমাদের ব্যবসায়ীরা সেখানে নিজেদের জিনিস বিক্রিই করতে পারেনি। পাশাপাশি ভারত রাশিয়ার থেকেই তাদের সবথেকে বেশি তেল ও সামরিক সামগ্রী কেনে। আমেরিকা থেকে খুব সামান্যই কেনে। এখন ভারত তাদের শুল্ক কমিয়ে শূন্য করে দিতে চাইছে, কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দাবি কতটা দ্বিচারিতা তা সাম্প্রতিক মার্কিন আধিকারিকদের বক্তব্যেই স্পষ্ট। একদিকে মার্কিন স্টেট সেক্রেটারি বলছেন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। অন্যদিকে সেই বন্ধুর সঙ্গে আর কোনও শুল্ক আলোচনা সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং ট্রাম্প। অথচ মার্কিন বাজারের হিসাব বলছে ভারতে জিনিস বিক্রি থেকে পরিষেবা বিক্রিসহ আমেরিকায় ভারতীয় পড়ুয়াদের বাৎসরিক খরচে আমেরিকার লাভের অংকটা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
যে সব ক্ষেত্রে আমেরিকা ভারত থেকে আয় করে
ভারতীয় ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের থেকে মার্কিন গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, অ্যাপল-এর মতো সংস্থা বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাভ করে
ভারতে খাবার-পানীয় বিক্রি করে ম্যাকডোনাল্ড, কোকা-কোলার মতো সংস্থা প্রায় ১৫ শত কোটি মার্কিন ডলার লাভ করে
ওয়াল স্ট্রিটের মতো আর্থিক সংস্থা প্রায় ১৫ শত কোটি লাভ করে
আইবিএম, ওয়ালমার্টের মতো সংস্থাও লাভ করে প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার
প্রতিবছর আমেরিকায় যে পরিমাণ ভারতীয় পড়ুয়া যায় তারা সেখানকার অর্থনীতিতে প্রায় ২৫শত কোটি ডলার যোগ করে
এছাড়াও হলিউডের সিনেমা, বিভিন্ন স্ট্রিমিং পরিষেবা থেকেও অতিরিক্ত অনেক রাজস্ব আদায় করে আমেরিকা
আরও পড়ুন: আপাতত শাস্তি নয়: বিধানসভায় ‘কুস্তি’ করেও রেহাই ৪ বিজেপি বিধায়কের
এরপরেও ভারতে আমেরিকা যে কিছু বিক্রি করার সুযোগ পায় না, ট্রাম্পের এই দাবিতে আমেরিকারই দ্বিচারিতা স্পষ্ট। যদিও কূটনীতিকদের মতে ভারতের উপর শুল্ক লাগু করার পিছনে আমেরিকার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে, তা ফাঁস হয়ে যাওয়াতেই প্রতিদিন মাঠে নেমে না না তত্ত্ব খাঁড়া করতে হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
–
–
–
–