মন নেই ভোটে, নারীসঙ্গমুখী বামেদের বাইশ থেকে বাহান্ন লিখছে ‘অন্য’ ইতিহাস

0
2

৩৪ বছরের ইতিহাস শেষ। তার সঙ্গেই বাংলা থেকেও ধুয়ে মুছে সাফ বামেরা। বছরের এক এক সময়ে তাদের জেগে উঠে আবার নিভে যেতে দেখতেই অভ্যস্থ এখন বাংলার মানুষ। তবে বামেদের এখন আরও আক জায়গায় দেখতে ক্রমশ অভ্যস্থ হচ্ছে বাংলার মানুষ। এক সময়ে অধঃপতনের দিকে নামতে থাকা কেরালার বাম নেতারা যেভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পার্টি অফিসকে নারী সঙ্গের আখড়া হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন, তারই দোসর এবার বঙ্গের বাম নেতারা। যে নবীন প্রজন্মকে ভর করে দাঁড়াতে চাইছে বামেরা, সেই ছাত্র থেকে যুব নেতা – কেউ বাদ নেই তালিকায়।

ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে এক সময় যে এসএফআই দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতো, এখন সেই ছাত্র সংগঠনই ছাত্রীদের নিজেদের লালসা মেটাতে এখন ব্যবহার করছে। উত্তর চব্বিশ পরগণার এক নেত্রী ঋতঙ্কর দাস নামে এক এসএফআই নেতার নামে অভিযোগ তুলে দলই ছেড়ে দিলেন। অভিযোগ পত্রে মনোজিৎ মিশ্রর প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ওই ছাত্রী। মদ্যপান করার প্রস্তাব থেকে কাজের টোপও দিয়েছিলেন ওই ছাত্র নেতা, এমনটাই অভিযোগ।

কলকাতাতেও এই ধরনের অভিযোগ অমিল নয়। টালিগঞ্জের যুবনেতা সোমনাথ ঝার বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে দলের কাছে। বাধ্য হয়ে সিপিআইএম-এর যুব সংগঠনের কলকাতা কমিটি সোমনাথকে বহিষ্কারের পথে গিয়েছে।

ছাত্র থেকে যুবতেও রোগ যে ছড়িয়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ ডিওয়াইএফআই-এর বর্তমান কমিটি। নতুন কমিটি গঠন হওয়ার সময়েই তার শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের নির্বাচনের সময়ে ফের একবার সরব বাম নেত্রীরা। সেখানে সোহন মুখোপাধ্য়ায়কে শীর্ষ স্থানে বাসনো নিয়ে প্রতিবাদে সরব হন বাম যুব নেত্রীরাই। কীভাবে যুব সংগঠনের তৃতীয় শীর্ষস্থানে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তি থাকতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

সাম্প্রতিক না হলেও এই দোষে যে বাম যুবনেতারা অনেক আগে থেকেই দুষ্ট, তা কলকাতার নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্য়ায়ের ঘটনাতে প্রমাণ মিলেছিল। ২০১৮-তে নারী সম্পর্কিত অভিযোগ বহিষ্কার হতে হয়েছিল তৎকালীন দাপুটে যুবনেতাকে। যদিও সেই সময়ে এই ধরনের অভিযোগে পদক্ষেপ নিলেও এখন বিষয়টা বাম নেতাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে তা স্পষ্ট ছাত্র থেকে যুবনেতাদের বিরুদ্ধে বাম নেতৃত্বের নীরবতায়।

ছোটদের এই ‘গমনে’ যে বড়দেরও হাত রয়েছে, তা স্পষ্ট একাধিক স্বনামধন্য নেতাদের কীর্তিতে। যার মধ্যে বংশগোপাল চৌধুরির বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল কুপ্রস্তাবের অভিযোগে সম্প্রতি সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। জবাবদিহি থেকে তদন্ত – সবই হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যে কে সেই। আদতে যৌন হেনস্থার কোনও বিচার অভিযোগকারিনী পেয়েছিলেন কি না তার আর হদিশ মেলেনি।

আর শাস্তি দিয়ে যে যেটুকু কর্মী, নেতা রয়েছে, তাদেরও হারাতে চায় না বামেরা, তা তো স্পষ্ট সুশান্ত ঘোষের বেলাতেই। ভাইরাল ভিডিও (ভাইরাল ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি বিশ্ববাংলা সংবাদ) প্রকাশ্যে আসার পরে কার্যত কোনও পদক্ষেপই নেয়নি দল। শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সিপিআইএম জেলা কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দলের সব অলিখিত পদ আজও তিনিই ভোগ করে চলেছেন।

তবে এর থেকেও বড় উদাহরণ প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। সাংবাদিক তরুণীকে যৌন হেনস্থার পরে রাজ্যে তা নিয়ে কম শোরগোল হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বারবার কমিটি তৈরি হয়েছে, তদন্ত হবে বলে। তবে তদন্তের নামে সিপিআইএম রাজ্য কমিটি কী করেছে শেষ পর্যন্ত তা বলাই বাহুল্য। দল থেকে সাসপেন্ড হন তন্ময়। ফের তাঁকে দলে নিয়ে সিপিআইএম নিজের শ্রী বৃদ্ধিও করেছে।

যদি ধরে নেওয়া যায় বাম বর্ষীয়ান নেতাদের থেকেই যুব ও ছাত্রতে এই রোগ ক্রমশ ছড়াচ্ছে তবে সুশান্ত-তন্ময়ের উদাহরণের থেকে বেশি বোধহয় আর কিছু প্রয়োজন হয় না। তবে সেখানেও প্রশ্ন উঠবে বর্ষীয়ান নেতা তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে নিয়েও। দলের অন্দরে যেভাবে নারীর নামের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে, তাতে ক্রোনোলজি যথেষ্ট স্পষ্ট, তাতে সন্দেহ নেই।