মোদি ফ্যাসিবাদী।
আমাদের রাজনৈতিক শত্রু হল বিজেপি।
তামিলরা এই দলটার পাশে থাকবে না।
বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।
২১ অগাস্ট। মাদুরাইতে অভিনেতা থালাপতি বিজয়ের (Thalapathy Vijay) জনসভাটা দেখেছেন। ফোন খুলে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করলেই তার ছবি। কত মানুষ হবেন? ১০ লক্ষ? নাকি তারও বেশি? ড্রোন ক্যামেরাও ধরতে পারছে না মানুষের ভিড়কে।
ভাবুন, ৪১ ডিগ্রি গরমের দুপুর। তার মাঝে জনপ্লাবন। সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় জনসভা ভারতে কেউ দেখেছেন? দেখা তো দূরের কথা, ভাবাও যায় না। এ এক রেকর্ড। দক্ষিণে পর্দার তারকাদের নিয়ে উন্মাদনা মাত্রাছাড়া। রাজনীতিতে তারা সফলও হয়েছেন। তালিকাটা খারাপ নয়। এম জি রামচন্দ্রণ, বিজয়াকান্ত, জয়ললিতা। এই তালিকায় জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। থালাপথি বা সেনাপতি নামেই পরিচিত, জনপ্রিয়।
হঠাৎ রাজনীতিতে এসে পড়েছেন এমনটা নয়। ২০০০-এর শুরু থেকেই বিজয়ের ফ্যান ক্লাবগুলো সংগঠিত হতে শুরু করে। ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পুদুক্কোট্টাইয়ে বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কাম (বিএমআই) (Vijay Makkal Iyakkham) নামে একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থা তৈরি করেন, যা বিভিন্ন জনসেবার কাজ করত। একসময় বিএমআই-এর মাধ্যমে তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাও দিতে শুরু করেন। রাজনৈতিক শক্তি যাচাইয়ের প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল ২০২১ সালের গ্রামীণ স্থানীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএমআই-এর সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১২৯টিতে জয়লাভ করে, যা এক কথায় ছিল অপ্রত্যাশিত সাফল্য । এরপর ২০২২ সালের শহুরে স্থানীয় নির্বাচনেও তারা আরও ১০টি আসন জয় করে।
২০২৩ থেকে রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি শুরু। এ বছরের গোড়ায় ফেব্রুয়ারিতে নতুন দলের নাম ঘোষণা, তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (টিভিকে)। স্পষ্ট বলেছিলেন, হাতে দুটো ছবি রয়েছে। শেষ করবেন। তারপর আর ছবি নয়। শুধুই রাজনীতি। ‘দ্য গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম’ আর ‘জননায়াকম’ শেষ করেই ২১ অগাস্টের সভা। জনবিস্ফোরণ। এর আগে ২০২৪-এর অক্টোবরে একটি সভা করেন। সেই সভায় জনবিস্ফোরণ ৮ লাখ পেরিয়ে গিয়েছিল।
সভা থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। এক, ২০২৬ এ তামিলনাড়ু বিধানসভা ভোটে তিনি প্রার্থী হবেন মাদুরাই পূর্ব আসনে। আর দুই হল, বিজেপি উৎখাতের যুদ্ধ শুরু। তাহলে ডিএমকে? বিজয়ের জবাব, ডিএমকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। ভোটে লড়াই হবে।
তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক সমীকরণে ক্ষমতাসীন স্ট্যালিনের ডিএমকে আর জয়ললিতার এআইডিএমকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু দক্ষিণের ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইএডিএকমকে ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। ছাব্বিশের লড়াই বিজয়ের দলের সঙ্গে স্ট্যালিনের দলের।
দক্ষিণে বিজেপি কার্যত নেই। বিচ্ছিন্ন কয়েক জায়গায় রয়ে গিয়েছে। কিন্তু যেভাবে থালাপথি বিজয় (Thalapathy Vijay) কোমর বেঁধে নেমেছেন, তাতে এবার তারা ধুয়ে মুছে সাফ হলে অবাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। স্ট্যালিনের দলের সঙ্গে ভোট ভাগাভাগি কোন পর্যায়ে যায়, তার উপর নির্ভর করছে তামিলনাড়ুতে ছাব্বিশের ভোটের ফল।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র পুলিশের বেপরোয়া অত্যাচার! প্রাণ গেল আরও এক বাংলার শ্রমিকের
কিন্তু বিজেপি বুঝতে পারছে, তামিলিনাড়ুতে মানুষ যেভাবে বিজেপি বিরোধী হচ্ছে তাতে বিজেপির ঘর পুড়তে বাধ্য। বিজয়ের সাফল্য যে দক্ষিণের রাজ্যগুলির উপর ছাপ ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দক্ষিণের রাজনীতিতে বিজয় যে আগামিদিনের ট্রাম্প কার্ড হতে চলেছেন তা তাঁর রাজ্যবাসীই বুঝিয়ে দিয়েছেন। দল সাজিয়েছেন দু’ বছর ধরে। বিধানসভা ভোটে অ্যাসিড টেস্ট।
তামিল রাজনীতে কি মোড় ঘুরিয়ে দিতে চলেছেন বিজয়! অপেক্ষা আর ৯ মাসের! বিজয় বলছেন, সত্যের জয় সর্বত্র।! কিন্তু বিজেপি নিধনে কতখানি সফল হবেন, তার জন্য অপেক্ষা কয়েক মাসের।