১২ বছর বয়স থেকে অগুন্তি গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করছেন তিনি। সম্মানিত হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রীতে (Padmashree)। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন পুরস্কার। কিন্তু তারপরেও জোটেনি মাথার উপর পাকা ছাদ। বর্তমানে পুরুলিয়ার (Purulia) ছোট্ট একটি গ্রামে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ভারতের ‘ট্রি ম্যান’ দুখু মাঝি (Dukhu Majhi)।
২০০৪ সাল থেকে নিজের উদ্যোগে অসংখ্য গাছ লাগিয়েছেন দুখু মাঝি— সবই নিজের খরচে। তার বিনিময়ে ২০১৯ সালে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। সেই সময় রাষ্ট্রপতি স্বয়ং তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তার বাড়ির সামনে লেখা রাষ্ট্রপতি দ্বারা পুরস্কার প্রাপ্ত।সেই সময় তাঁকে নিয়ে প্রশংসার ঝড় উঠ ঝড় উঠেছিল। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁর জীবনযাত্রায় বিশেষ পরিবর্তন আসেনি।
ছোট্ট একটি মাটির বাড়ি, যার উপর কালো পলিথিন টাঙিয়ে মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই। বর্ষার জলে ভিজে একসা জামাকাপড়, বিছানা সবকিছু। সামান্য খাবারটুকুও কিনতে অসমর্থ। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকেও মিলছে না কোন সহায়তা। চোখের জলে তিনি জানালেন, “পদ্মশ্রী পেয়েছি ঠিকই কিন্তু পেট চালাবো কি দিয়ে?”
কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার বলা হয়েছে, “পদ্ম পুরস্কার শুধু সম্মান নয়, সরকারের কৃতজ্ঞতা।” কিন্তু দুখু মাঝির মতো মানুষদের ক্ষেত্রে সেই কৃতজ্ঞতা শুধু সংবাদ শিরোনামে সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প উজালা যোজনার মতই সব দেখনদারি। সব গুলোর বাস্তব রূপায়ণ, বাস্তব মানুষের জীবনে কতটা পৌঁছচ্ছে তাতে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই।— দুখু মাঝির কাহিনী যেন সেই প্রশ্নই ছুঁড়ে দেয়।
বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার আগেই সম্ভবত ২০২১-২২ আর্থিক বছরে দুখু মাঝির একই হাউসহোল্ডে কেন্দ্রের বাড়ি মিলেছে। আলাদা জব কার্ড, আলাদা রেশন কার্ড এসব থাকলে তখনই নতুনভাবে বাড়ির দেওয়ার বিষয়টি আসতো। যে হাউসহোল্ডে তাঁকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে সেখানে তিনি পরিবারের কর্তা।” প্রশাসনের এই ব্যাখ্যায় ভীষণ হতাশ ‘গাছ দাদু’। তাঁর কথায়, “আমি এই পুরস্কার পাওয়ার পর জনপ্রতিনিধি থেকে আধিকারিক – কত মানুষ আমার কাছে এসে বলে গিয়েছিলেন, তারা একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। তাঁর আশা, ” কষ্ট হলেও সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে আমার, আমার পরিবারের। প্রশাসন থেকে সরকার যদি সঠিক মনে করে তাহলে বাড়ি মিলবে। সেই আশাতেই থাকি না কেন!”
–
–
–
–
–
–
–
–