বামেদের গা জোয়ারি-অশান্তি বাঁধানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ করে স্বাভাবিক বাংলা

0
2

বাংলার মাটিতে ব্যর্থই হল বামেদের ডাকা কর্মনাশা বনধ (Strike)। পাহাড় থেকে সমতল প্রায় কোথাওই বনধের কোনো প্রভাব দেখা য়ায়নি। কলকাতা ও জেলার সামান্য কয়েকটি যায়গায় প্ররোচনা, হিংসা, অশান্তি বাঁধিয়ে বন্ধ সফল করার প্রয়াস দেখা গেছে সকালের দিকে। তবে প্রশাসনিক সক্রিয়তার কারণে খাপ খুলতে পারেননি ধর্মঘটিরা। আর দশটা কাজের দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে পথে নেমেছেন মানুষ। অফিস-কাছাড়ি, দোকানপাট সবই ছিল খোলা। যানবাহন চলাচলও করেছে স্বাভাবিক ভাবেই। সরকারি-বেসরকারি বাস চলেছে নিজস্ব গতিতেই, অধিকাংশ বাজারখোলাই ছিল। তবে পথে গাড়ির চাপ কম থাকার জন্য বনধের (Strike) থেকে প্রতিকূল আবহাওয়া ও লাগাতার বৃষ্টিকে দায়ী মনে করছেন অনেকে। নবান্ন (Nabanna) সহ রাজ্য সরকারের অধিকাংশ দফতরে হাজিরা ছিল ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশ।

তবে সকালে দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান, যাদবপুর, লেকটাউন, দমদম ও উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ—বিভিন্ন এলাকায় বামপন্থী ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, পথ অবরোধ ও রেলপথে অবরোধের চেষ্টা দেখা যায়। ৮বি বাসস্ট্যান্ডে আগুন লাগানো টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, গাঙ্গুলিবাগানে রাস্তায় বসে বাম সমর্থকদের ট্রাফিক জ্যাম তৈরি, যাদবপুর স্টেশনে রেল অবরোধ—একাধিক জায়গায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও দ্রুত হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে হঠাৎ আক্রমণাত্মক আচরণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন একাধিক আন্দোলনকারী। এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য-সহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে।

বনধ সমর্থকরা কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, শ্যামবাজার, লেকটাউন, দমদম, শ্যামনগর, উলুবেড়িয়া, দুর্গাপুর, লালগোলা-সহ একাধিক জায়গায় রাস্তাঘাট ও রেলপথ অবরোধ করেন। কোথাও কোথাও দোকানপাট বন্ধ করতে জোর করার অভিযোগ ওঠে। ডোমজুড়ে পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বনধ সমর্থকরা। শিলিগুড়ির হিল কার্ট রোডে পুলিশের টুপি খুলে নেওয়ার ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। বীরভূমের কিরনাহারে বাম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। রামপুরহাটে জাতীয় সড়ক অবরোধের পর রেললাইনে নেমে পড়ে আন্দোলনকারীরা।

তবে রাজ্য সরকারের তরফে আগে থেকেই অতিরিক্ত বাস চালানো, কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সব দফতরে কর্মীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বনধ ব্যর্থ করতে কার্যকর হয়েছে। কলকাতা-সহ অন্যান্য শহরের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম থাকলেও যানজট দেখা যায়নি। অধিকাংশ অফিস, আদালত ও বাজার খোলা ছিল। ট্রেন চলাচলে কোথাও কোথাও বিঘ্ন ঘটলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, “বনধ নয়, এটা ছিল সন্ত্রাসের প্রচেষ্টা। মানুষ বনধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।” অন্যদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল বিজেপির থেকেও বেশি বিজেপি হতে চাইছে। গণআন্দোলন দমন করে বেশিদিন চলা যায় না।” কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, “তৃণমূল আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।”

বনধের নামে রাজ্যে হিংসার চেষ্টা থাকলেও কার্যত কোনো বড় প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। সুষ্ঠু পরিবহণ, সরকারি দফতরে সর্বোচ্চ উপস্থিতি এবং বামেদের প্রতিরোধে প্রশাসনের কড়া অবস্থানই বুধবারের ‘ব্যর্থ বনধ’-এর ইতি টানে। আরও পড়ুন : পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসছে কেন্দ্র, বাংলার তরফে থাকতে পারেন চন্দ্রিমা